5 minutes read
কিভাবে আপনি মার্কেটের সবচেয়ে ভালো ফ্ল্যাটটি পেতে পারেন এটা নির্ভর করছে আপনার বাজেট ও পছন্দের লোকেশনের উপর মার্কেট রিচার্জ,ফ্ল্যাটের সঠিক ডাটাবেজ কালেকশন ,প্রজেক্ট এনালাইসেস এবং সর্বোপরি সঠিক সময়ে অপেক্ষাকৃত ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপর। আর এই বিষয়গুলো একজন রিয়েল এস্টেট কনসালটেন্ট এর সহযোগিতার মাধ্যমে পেতে পারেন । একজন সচেতন কাস্টমার হিসেবে রিয়েল এস্টেট এ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আপনার কী কী অধিকার আছে এ বিষয়ে কনসালটেন্ট এর কাছে থেকে সবকিছু বুঝে নেবেন। ভালো হয় যদি আপনি অ্যাপার্টমেন্ট পার্সেস চেকলিস্ট সংগ্রহ করে প্রত্যেকটি বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন। তারপর কনসালটেন্ট আপনার বাজেট ও ফান্ড এরেঞ্জ এর উপর ভিত্তি করে একটি সময় উপযোগী ফাইন্যান্সিয়াল প্ল্যান রেডি করে দিবেন। এই ফাইন্যান্সিয়াল প্লেনে আপনি কিভাবে ফান্ড এরেঞ্জ করবেন এবং কোন কোন খাতে কত টাকা খরচ হবে তার সম্ভাব্য একটা তালিকা তৈরি করা হবে। অনেক সময় ডেভলপার কোম্পানী কোন কোন বিষয় কত টাকা খরচ হবে সেটা প্রথমে স্পষ্ট করে উল্লেখ করে না পরবর্তীতে অতিরিক্ত চার্জ ধার্য করে থাকে। তাই নতুন গ্রাহককে এ নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এবং অপত্যাশিতভাবে বিনিয়োগ খরচ বৃদ্ধি পায়। আপনার বাজেট ও পছন্দের লোকেশন এর উপর ভিত্তি করে কনসালটেন্ট এর সহযোগিতায় উপযুক্ত ডাটা কালেকশন করতে হবে । এই ডাটাবেজে ফ্ল্যাটের লোকেশন, সাইজ ,পার স্কয়ার ফিট আসকিং প্রাইস, হ্যান্ড ওভার ডেট, কন্ট্যাক্ট পার্সন ইত্যাদি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষিত হবে ।তার পর প্রতিটি ফ্ল্যাট কনসালটেন্ট এর সাথে সরাসরি ভিজিট করে সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে স্কোরিং করতে হবে।এই স্কোরিং এর উপর ভিত্তি করে শর্ট লিস্ট করতে হবে। শর্ট লিস্টটি দুই বা তিনটি ফ্ল্যাট এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে ।সর্বশেষ যে ফ্ল্যাটটি কেনার জন্য সিদ্ধান্ত নিবেন তার প্রয়োজনীয় লিগ্যাল ডকুমেন্ট কনসালটেন্ট এবং আইনজীবীর মাধ্যমে মাধ্যমে যাচাই বাছাই করতে হবে। যদি ফ্ল্যাটের সকল ডকুমেন্ট সঠিক থাকে তবে আপনি এগ্রিমেন্টে যেতে পারেন।
একটি বিল্ডিং এর নির্মাণের বিভিন্ন ধাপ অনুযায়ী কয়েকটি পর্যায় ভাগ করা যায় :
১। প্রি– কনস্ট্রাকশন স্টেজ
২। সাব–স্ট্রাকচারাল স্টেজ
৩। সুপার স্ট্রাকচারাল স্টেজ
৪। ফিনিশিং স্টেজ
৫।পোস্ট হ্যান্ড ওভার স্টেজ

উপরোক্ত প্রত্যেকটা ধাপে ফ্ল্যাট কেনার কিছু সুবিধা ও কিছু অসুবিধা রয়েছে। নিম্নে তা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো :
প্রি– কনস্ট্রাকশন স্টেজ : কোন বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন এর কাজ আরম্ভ করার পূর্বে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে যেমন : সয়েল টেস্ট সম্পাদন, বিভিন্ন অথরিটির পারমিশন নেওয়া, রাজউক প্লান পাস, জমির মালিকের সাথে চুক্তিপত্র সম্পাদন,পাওয়ার অফ এটর্নি এপ্রুভাল ইত্যাদি। এই সময় কালে যে সকল কাজ হয় তা প্রি-কনস্ট্রাকশন স্টেজ এর অন্তর্ভুক্ত। এই পর্যায়ে কোন ডেভেলপার কোম্পানির সাথে ফ্ল্যাট কেনার জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে হলে আপনাকে অবশ্যই জেনে নিতে হবে উক্ত প্রোজেক্টের প্লেন রাজউক থেকে অনুমোদিত হয়েছে কিনা। কারণ রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী কোন ডেভলপার কোম্পানী কোন প্রজেক্ট এর প্ল্যান অনুমোদন হওয়ার পূর্বে কোন ক্রেতার সাথে বিক্রয় বা বিক্রয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হইতে পারবে না । কাজেই আপনাকে ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রথমে দেখে নিতে হবে উক্ত প্রোজেক্টের রাজউক থেকে অনুমোদিত হয়েছে কিনা ।
সাধারণত এই পর্যায়ে ডেভলপার কোম্পানী গুলো পার স্কয়ার ফিটের বিক্রয় মূল্য তুলনা মূলক কম নির্ধারিত করে। এই সময় কালে ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয় খুব কম হয়ে থাকে। অনেকে পার স্কয়ার ফিট দাম কম হওয়ায় এবং দীর্ঘ কিস্তি থাকার দরুন এই সময় ডেভেলপার কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকেন। যদিও এই সময় কালে আপনার পছন্দমত পজিশনে এবং ফ্লোরে ফ্ল্যাট বাছাই করে নিতে পারবেন। তবে আপনি এই সময় চুক্তিবদ্ধ হলে বেশ কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারেন। যেমন : অনেক ছোট কিংবা মাঝারি ডেভলপার কোম্পানির গুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে ফান্ড নিয়ে কনস্ট্রাকশনের কাজ আরম্ভ করে না । যে কারণে ফ্ল্যাট বিক্রি না হলে তারা সঠিক সময়ে প্রজেক্টে নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারে না। এমন অনেক দেখা গেছে,বছরের পর বছর কনস্ট্রাকশন কাজ ডেভেলপার বন্ধ রাখছে পর্যাপ্ত ফান্ড না থাকার দরুন।
সাব–স্ট্রাকচারাল স্টেজ : প্রজেক্ট এর ফাউন্ডেশন, পাইলিং, মাটি খনন গ্রেট বীম পর্যন্ত যে সকল কাজ হয় তা সাব- স্ট্রাকচারাল স্টেজে অন্তর্ভুক্ত। সহজ ভাবে বলতে গেলে প্রজেক্ট শুরু থেকে মাটির নিচে সবগুলো কাজ সাব- স্ট্রাকচারাল স্টেজ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই ধাপে ফ্ল্যাট ক্রয় করার সুবিধা ও অসুবিধা পূর্ববর্তী ধাপের অনুরূপ।
সুপার–স্ট্রাকচারাল স্টেজ : সাব-স্ট্রাকচারাল স্টেজের পরবর্তী পর্যায়ে হচ্ছে সুপার স্ট্রাকচার স্টেজ। গ্রেট বীম থেকে প্রজেক্ট এর সর্বশেষ ছাদের ওভারহেড ওয়াটার রিজার্ভার পর্যন্ত যে কাজগুলো সম্পন্ন করা হয় তা এই স্টেজএ অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ করে কলাম, ছাদ, ভীম, সিঁড়ি ইত্যাদি এই পর্যায়ে কাজ করা হয় থাকে। একটি প্রজেক্ট এর সুপার স্ট্রাকচার এর কাজকে প্রোজেক্টের অবকাঠামো বুঝায়। যে কোন বিল্ডিং এর সাব স্ট্রাকচার এবং সুপার স্ট্রাকচার কাজ হচ্ছে নির্মাণের দিক থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । এই পর্যায়ে তুলনামূলক ফ্ল্যাট ক্রয় বিক্রয় পূর্ববর্তী ধাপ সমূহ থেকে বেশি হয়ে থাকে। একটি বড় রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান সার্ভে অনুযায়ী ২২ শতাংশ ফ্ল্যাট এই পর্যায়ে বিক্রি হয়ে থাকে।
ফিনিশিং-স্টেজ : সুপার স্ট্রাকচার স্টেজ এর পরবর্তী পর্যায়ে হচ্ছে ফিনিশিং স্টেজ। এই সময় ফ্ল্যাট কেনার কিছু সুবিধা আছে আপনি যদি ভিতরে কোন কিছু কাস্টমাইজ করতে চান এবং ডেভেলপার কোম্পানিতে যে সকল টাইলস ,মার্বেল, সি পি ফিটিং দিবে তার চেয়ে উন্নত মানের প্রতিস্থাপন করতে চাইলে তা কোম্পানির সাথে আলোচনা করে নিতে পারবেন । তবে বাজারে সাপ্লাই এর তুলনায় ডিমান্ড বেশি হলে ফিনিশিং স্টেজে ভালো কোম্পানির ফ্ল্যাট খুব একটা পাওয়া যায় না। ফিনিশিং পর্যায়ে কাজ করতে বেশি সময়, টাকা এবং জনবল প্রয়োজন পড়ে। কারণ এই সময় একই সাথে সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল, প্লাম্বিং,থাই, উডেন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের কাজ সমন্বয় করে পরিচালনা করতে হয়।এছাড়া এডিশনাল ওয়াক ইন্টেরিয়র ডিজাইন ইত্যাদি বিভিন্ন কাজ এই ফিনিশিং স্টেজে করতে হয়।এই সময় কালে সবচেয়ে বেশি ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে থাকে ।আমাদের দেশে পেক্ষাপটে ফ্ল্যাট কেনার জন্য ফিনিশিং স্টেজই সবচেয়ে সুবিধাজনক সময়।
পোস্ট হ্যান্ড ওভার স্টেজ : সম্পূর্ণ প্রজেক্ট হ্যান্ড ওভার করার পর ও অনেক ডেভলপার কোম্পানী ফ্ল্যাট বিক্রয় করতে পারে না । সেই ক্ষেত্রে তারা হ্যান্ড ওভার পরে বিক্রি করে থাকে ।আবার অনেক জমির মালিক বা পূর্বে ফ্ল্যাট ক্রয় কৃত ব্যক্তি এই সময় বিক্রি করে থাকেন ।এ সময় ফ্ল্যাট কিনতে গেলে আপনি সম্পূর্ণ রেডি অবস্থায় ফ্ল্যাট পাচ্ছেন তবে এরকম রেডি ফ্ল্যাট এককালীন টাকা পরিশোধের মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিনতে হয়। এই সময় কালে ফ্ল্যাটের কোন কাজ থাকেনা তবে বিল্ডিং এর মেনটেনেন্স জন্য কিছু কাজ থাকতে পারে।এই সময়ে কালে ফ্ল্যাট ক্রয় করতে চাইলে অ্যাপার্টমেন্ট ওনার এসোসিয়েশন এর সভাপতি এবং সেক্রেটারি সাথে যোগাযোগ করে আপনার পছন্দের ফ্ল্যাট সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন ।
সেকেন্ড হ্যান্ড বা পুরাতন ফ্ল্যাট : সেকেন্ড হ্যান্ড বা পুরাতন ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে প্রথমে জানতে হবে বিক্রেতা কেন ফ্ল্যাটটি বিক্রি করতে চাচ্ছেন। তারপর ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজার মূল্য কত হবে তা কনসালটেন্ট এর মাধ্যমে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। বিক্রেতা সব সময় ওভার প্রাইস চেয়ে থাকেন, তবে ক্রেতা হিসেবে আপনি সব সময় চেষ্টা করবেন বাজার মূল্য থেকেও কম দামে কেনা যায় কি না। মাঝে মাঝে পুরাতন বা সেকেন্ড হ্যান্ড ফ্ল্যাট বাজার মূল্য থেকে কম টাকায় পাওয়া যায় তবে আপনাকে অবশ্যই ফ্ল্যাটের ডকুমেন্টেশন ভালো করে কনসালটেন্ট এর মাধ্যমে চেক করে নিতে হবে। উক্ত বিল্ডিং এ বসবাসরত অ্যাপার্টমেন্ট ওনার অ্যাসোসিয়েশন সাথে যোগাযোগ করে মালিক সম্পর্কে এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় জেনে নেওয়া প্রয়োজন। যদি ফ্ল্যাটটি রেজিস্ট্রেশন করা না হয়ে থাকে তবে যে কোম্পানি থেকে বিক্রেতা ফ্ল্যাটটি ক্রয় করেছেন সে কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে কোন প্রকার লেনদেন অসম্পূর্ণ আছে কিনা বা রেজিস্ট্রেশন করতে কোন অসুবিধা হবে কিনা জেনে নেওয়া প্রয়োজন। পুরাতন ফ্ল্যাট ক্রয় করার ক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে ফ্ল্যাটটি যাতে খুব বেশি পুরাতন না হয় এবং আশেপাশের পরিবেশ ও আর্থ–সামাজিক অবকাঠামোগত অবস্থা । তবে এর ব্যতিক্রম ও আছে যেমন ধরুন, আপনি একটি পুরাতন ফ্ল্যাট কিনলেন যেখানে মাত্র ০৫টি ফ্ল্যাট ০৫ কাঠা জায়গার মধ্যে। বিল্ডিং টি যখন নির্মাণ করা হয়েছিল তখন রাজউক এই এলাকাতে ছয় তলার বেশি অনুমতি দিত না। কিন্তু বর্তমানে ১০ তালার চেয়ে বেশি অনুমতি দিচ্ছে অথবা এই প্লট টি কমার্শিয়াল এলাকার সন্নিকটে যার বাজার মূল্য তুলনামূলক ভালো। এক্ষেত্রে ফ্ল্যাটের মালিকরা সম্মিলিতভাবে পুনরায় বাড়িটি নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নিতে পারেন অথবা ডেভেলপার কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার জন্য চিন্তা করতে পারেন। কারণ প্রত্যেক ফ্ল্যাট মালিকরা জায়গার অনুপাতিক হারে ফ্ল্যাট পাবেন। তাই বলা হয় প্রতিটি প্রজেক্ট এর ভ্যালুয়েশন নির্ণয় করতে ভিন্ন ভিন্ন স্ট্যাটিজি উপর পর্যালোচনা করা হয় থাকে। একজন কনসালটেন্ট বিভিন্ন ভাবে রিচার্জ ও এনালাইসিস এর মাধ্যমে কাস্টমারকে এসব বিষয়ে বিস্তারিত বুঝাতে পারবেন।
ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে সব সময় ডেভেলপার কোম্পানির কাছে না গিয়ে সম্ভব হলে জমির মালিকের কাছ থেকে ফ্ল্যাট কেনা যায় কিনা সে বিষয়ে চেষ্টা করা প্রয়োজন। কারণ একই বিল্ডিং এ ডেভলপার কোম্পানী পার স্কয়ার ফিট যে দামে বিক্রি করবে জমির মালিকের বরাদ্দকৃত ফ্ল্যাট তুলনা মূলক কম টাকায় পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই ক্ষেত্রে আপনি কোন এজেন্ট বা মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ না করে সরাসরি জমির মালিকের সাথে যোগাযোগ করা যায় কিনা সে বিষয়ে চেষ্টা করতে পারেন। যদি জমির মালিকের কাছ থেকে আপনি ফ্ল্যাট ক্রয় করতে চান তবে হ্যান্ড ওভার স্টেজে ফ্ল্যাট ক্রয় করার চেষ্টা করবেন এবং সম্পূর্ণ টাকা যেদিন পরিশোধ করবেন সেই দিনই রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে নিতে হবে। তাই আপনাকে হ্যান্ড ওভার স্টেজ বা রেডি ফ্ল্যাট জমির মালিককে কাছ থেকে কেনা উত্তম।
কমিউনিটি বিল্ড-আপ :ইদানিংকালে কমিউনিটি বিল্ড আপ করে ফ্ল্যাট নির্মাণ করা একটি নতুন ধারা সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকজন ক্রেতা সম্মিলিতভাবে একটি জমি ক্রয় করে সেখানে নিজেদের উদ্যোগে বিল্ডিং নির্মাণ করার মাধ্যমে সবাই ফ্ল্যাটের গর্বিত মালিক হতে পারেন। এই পদ্ধতিতে তুলনামূলক ভাবে কম টাকার মধ্যে ফ্ল্যাটের মালিক হওয়ার সুবিধা যেমন আছে তেমনি কিছু অসুবিধা ও আছে । সাধারণত ডেভলপার কোম্পানী গুলো জমির মূল্য এবং নির্মাণ খরচের পর তারা কিছু টাকা মুনাফা অর্জন করে প্রত্যেকটি ফ্ল্যাট বিক্রি করে। এই সিস্টেম এর মাধ্যমে ডেভলপার কোম্পানী যে মুনাফা অর্জন করে মালিকরা তা সঞ্চয় করতে পারবেন। ফ্ল্যাট মালিকদের পছন্দমত প্রোজেক্টের নির্দিষ্ট স্থান, ড্রয়িং ডিজাইন, নির্মাণ সামগ্রী ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারবেন। এখানে ডেভলপার কোম্পানী উপর কোন নির্ভরশীলতা নেই। এমন কি তারা দু একটি ফ্ল্যাট বিক্রি করে ফান্ড এরেঞ্জ করতে পারবেন। তবে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে ফ্ল্যাট নির্মাণের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হচ্ছে সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সঠিক সমন্বয়ের মাধ্যমে নির্মাণ কাজ শুরু থেকে শেষ করা। এখানে একই মন মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের একত্রিত করে ফান্ড এরেঞ্জ করে উপযুক্ত যাচাই-বাছাই করে জায়গা নির্বাচন করা এবং নির্মাণ কোম্পানি মাধ্যমে সমস্ত কাজ শেষ করতে হয়। শুধু ইঞ্জিনিয়ার এর উপর নির্ভর করে বিল্ডিং নির্মাণ করা সম্ভব নয়। এজন্য মালিকদের মধ্যে যারা এ বিষয়ে দক্ষতা আছে এবং সঠিক মনিটরিং করতে পারবেন তাদের সহযোগিতা ব্যতীত প্রজেক্ট সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা যাবে না। ডেভলপার কোম্পানী গুলোতে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে দক্ষ লোক থাকায় প্রজেক্ট এর প্ল্যান পাশ থেকে শুরু করে হ্যান্ড ওভার পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় যা অনেক সময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বা কোন ব্যক্তির পক্ষে ততটা সহজে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুন্দরভাবে প্রজেক্ট হ্যান্ডওভার করা সম্ভব হয়ে উঠে না।

ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে বাস্তববাদী ও যথাসম্ভব যুক্তিসংগত চিন্তা করে অপেক্ষাকৃত ভালো সিদ্ধান্ত নিতে হবে ।কারণ আমরা অনেক সময় আবেগপ্রবণ হয়ে সিদ্ধান্ত নেই এবং বাস্তবতার নিরিখে চিন্তা করি না। যেমন ধরুন কোন একজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন কলাবাগানে বসবাস করছেন এবং উনি চিন্তা করলেন একই এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করার জন্য।কিন্তু উনি চাইলে উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরে যেখান থেকে মেট্রো রেল চালু হবে সেই এলাকায় ফ্ল্যাট ক্রয় করার চিন্তা করতে পারতেন ।এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে কলাবাগান আগামী দশ বছরে যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে তার চেয়ে বেশি উন্নয়ন হবে উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরে।যে টাকা কলাবাগানে ফ্ল্যাট ক্রয় বাবদ বিনিয়োগ হবে তার সমপরিমাণ টাকা উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরে বিনিয়োগ করলে তুলনামূলক বেশি নাগরিক সুযোগ-সুবিধা এবং পুনরায় বিক্রয় মূল্য বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। ফ্ল্যাট ক্রয় এর ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি কনসালটেন্ট এর কাছ থেকে রাজউক ফিউচার প্লান সম্পর্কে অবগত হয়ে নিবেন। যে এলাকাতে তুলনামূলক দ্রুত অর্থ সামাজিক অবকাঠামোগত (যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মেট্রোরেল, শপিং মল,বাজার, ব্যাংক,হাসপাতাল,পার্ক ,কর্পোরেট অফিস, রেল স্টেশন ও অন্যান্য) উন্নয়ন হবে সেই এলাকাতে ফ্ল্যাটের দাম দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং নাগরিক সকল সুবিধা সমূহ উপভোগ করতে পারবেন যা ভবিষ্যতে ফ্ল্যাটটি পুনরায় বিক্রি করতে চাইলে অপেক্ষাকৃত ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট কিনার জন্য ভালো সময় হচ্ছে মার্চ থেকে জুন। এই সময় গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে জুলাই মাস থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হয় এবং বাজেটে উপর ভিত্তি করে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পায় ।বাজেটে দু’একটা নির্মাণ সামগ্রীর দাম কমলেও বেশিরভাগ থাকে ঊর্ধ্বমুখী যে কারণে জুলাই মাস থেকে ফ্ল্যাটের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে । ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে মার্চ থেকে জুন এই সময়টা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার আরো একটি কারণ হচ্ছে এই সময়টা হচ্ছে আমাদের দেশের বর্ষাকাল ।আর ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই বর্ষাকালে আপনার ফ্ল্যাটের এলাকা পরিবেশ কেমন দেখায় তা ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন ।বিভিন্ন জরিপের আলোকে বলা যায় আমাদের দেশে বেশিরভাগ ফ্ল্যাট বিক্রয় হয়ে থাকে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে। আপনি যে এলাকা থেকে ফ্ল্যাট কেনার পরিকল্পনা করেছেন সেই এলাকা সম্পর্কে যদি ভাল ধারণা থাকে তবে বছরের যেকোনো সময় ফ্ল্যাট কেনার জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে পারেন।
ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার বাজেট, ফান্ড এরেঞ্জ ও প্রোজেক্টের অবকাঠামোগত অবস্থান দেখে কনসালটেন্ট এর পরামর্শ নিয়ে আপনি কোন স্টেজে ফ্ল্যাট কিনবেন, কিভাবে এবং কার মাধ্যমে কিনবেন সেটা নির্ধারণ করতে হবে। তবে প্রত্যেকটি প্রোজেক্টের ভিন্ন ভিন্ন স্ট্যাটিজি হয়ে থাকে এবং প্রত্যেকটা ডেভলপার কোম্পানী বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন বিষয় উপর আলোকপাত করে থাকে ,যা একজন কনসালট্যান্টের মাধ্যমে বিস্তারিত বুঝে নিতে পারবেন।Copy right no : Applicant
